
মানুষ হবো যেদিন
বন্দনা গুঁই রুজ
ঈশ্বরের এক অমূল্য বহুরূপী সৃষ্টি হলাম নারী,
জননী, কন্যা, জায়া, ভগিনী, কামিনী, সহচারী।
মায়ের কোল আলো করে আমার জন্ম হয়,
কিন্তু নারী হয়ে ওঠার পথ যে সুগম নয়।
সেই জন্মলগ্নে উলু ধ্বনি, শঙ্খ ধ্বনি,
কখনো বেজেছে আবার কখনো বাজে নি।
কেউ কেউ বলেছে,”লক্ষ্মী এলো ঘরে”,
আবার কেউ বলেছে, “মেয়েই হলো রে”।
বাড়ির লোক সবাই চায় আসবে ঘরে নাতি,
সেই তো হবে বংশ প্রদীপ স্বর্গে দেবে বাতি।
যেতে হবে শশুর বাড়ি, এটাই চিরাচরিত প্রথা,
কয়জনে বুঝে তখন হয় যে নারীর কত ব্যথা।
নিজের বাড়ি ছেড়ে গিয়ে পরের বাড়ি হয় আপন,
সেই স্থানেতে সকল নারীর হয় যে আসল ভাগ্য লিখন।
অন্দরমহলে হারিয়ে গেছে কত নারীর বেদনা,
আজও কান পাতলে শোনা যায়, তাদের নিঃশব্দ ক্রন্দন।
নারী, পুরুষের জন্ম দিয়ে নারী হয় জননী,
তবুও কিছু পুরুষ মাঝে নারী হয় ভোগ্য পন্য রমণী।
আমরা নারী হয়েছি এখন অনেক স্বাধীনচেতা,
রাতের বেলা তবুও আমাদের কোথায় নিরাপত্তা?
যখন নারী কেবল হবে মানুষ রূপে পরিচিত,
তখন থেকে আর কখনো হবে না নারী নির্যাতিত।
নারীর সাথে পুরুষের বৈষম্য হবে যেদিন দূর,
সমাজেতে বাজবে সেদিন মানবিক সাম্যের সুর।
সুন্দর গ্রাম
গ্রাম্য পরিবেশ
লাগতো ভালো শুনতে।
সকাল হলে রৌদ্র এসে
পরতো উঠোনেতে।
তুলসি তলায় মারুলি দিতো,
বৌয়েরা ঘোমটা মাথায় টেনে।
উঠানেতে প্রতিদিন গোবর,
ছড়া দিতো।
সকালের ঝলমলে রৌদ্দুর
এসে পড়তো মাঠে ঘাটে।
ধানের খেত হেলেদুলে
ঐ সূর্য্য মামাটাকে।
আম বাগানে ডাকছে কোকিল
মিষ্টি সুরে গাইছে গান
অন্য পাখী গানের তালে
নাচছে ডানা মেলে
কাকেরা সব করছে মিটিং
লোকের দালান ঘরের ছাদে।
নদীর পাড় ধরে বাউল ভাই
গান গেয়ে যাচ্ছে অনেক দূরে।
নৌকাগুলো নদীর জলে,
চলছে হেলে দুলে।
দিনের শেষে সূর্য্য
গেলো পাটে—-
চাষিরা সব ঘর ফেলে
লাঙ্গল হাতে–
সন্ধ্যা নেমে এলো
বইয়েরা সব তুলসিতলায়
প্রদীপ জেলে দিলো,
শঙ্খর সুর শুভ বার্তা নিয়ে
যাচ্ছে অনেক দূর-
দূরে থেকে ভেসে আসছে
কাঁসর ঘন্টার ধ্বনি।
রাত বারে যত,
ঝি ঝি পোকার ডাক শোনা যায় তত।
দূরের থেকে ভেসে আসে,
শেয়ালের ডাক।
পাহারাদার দিচ্ছে হাঁক,
বলছে জাগতে “রহ”
এগুলো সব গল্প এখন
এই পরিবেশ হয়েছে লুপ্ত।
এ এক চোখের সামনে
ভেসে ওঠার স্বপ্ন।
জাগো দুর্গা
নীলাদ্রি রুজ
এই মেয়ে তুই থামলি কেন?
আগুন জ্বালা ভিতর ঘরে,
আয়রে ছুটে ত্রিশূল হাতে,
ন্যায় বিচারের ধ্বজা ধরে।
আয়রে ছুটে দুগ্গা হয়ে,
পাপীরা বিনাশ করতে হবে,
শূন্য মায়ের নিথর বুকে,
শান্তি স্বয়ান রাখবে সবে।
স্বপন ভরা চোখদুটি তার,
হায়না হানে লোলুপ দৃষ্টি,
আজ অকালে কপাল পোড়ে,
জন্তুর কামে নষ্ট সৃষ্টি।
দেশের ভিতর পিশাচ ঘোরে,
আতঙ্ক আর ভয়ের বাণী,
ন্যায়ধর্মের এই সক্রিয়তায়
মানব জাতির জীবনহানি।
অন্ধকারে ঢেকেছে দিক,
ধরণী আজ কাঁপছে ভয়ে,
অসহায়া চুপসে গেছে,
সবই যেন গায়ে সয়ে।
নীরবতায় শয়তান হাসে
মাগো এবার ওঠো না জ্বলে,
মাটির দুর্গা কাঁদছে গোপন
জ্যান্ত দুগ্গা দলছে তলে।
নৈবেদ্য
অলক দাঁ
কত উপাচারে সাই মাগো
তোমার পুজোর থালা
ফল ফুল মিঠাই নাড়ু
শিউলি ফুলের মালা।
একশত আট পদ্ম ফুলে
করি গো উপাসনা
আশীর্বাদে পুরবে তুমি
সবার মনের বাসনা
তোমাকে ঘিরে কত আনন্দ
কত যে উন্মাদনা
নতুন পোশাক জামা জুতো
নতুন বাড়ির আঙিনা।
ধানের ক্ষেতে দিগন্ত হীন
সবুজ উর্মিমালা
তারই মাঝে সাদা কাশে
সমিরণের দোলা।
পশু পাখি তরু লতা
পদ্ম শালুক জলে
আনন্দময়ীর আগমনে
মনের আনন্দে খেলে।
ঢাকের তালে ছন্দে মিলে
মাকে বরণ করি
শান্তি দাও সুরক্ষা দাও
সুখী হোক পুরনারী।।
হংসধ্বনি
ঋত্বিক দত্ত
স্বপ্ন যেটুক সঞ্চয় তা,
কবেই গেছে খরচ খাতে,
এখন ভীষণ ভালো লাগে,
একলা মনে মেঘ জমাতো
এমনি করেই বৃষ্টি পড়ে,
মন খারাপের সমস্ত দিন,
আমি বুঝি ঝড়ের মত?
কাছে থাকা ভীষণ কঠিন?
বর্ষা শেষে ফুলবাগানে
ফুটলো যে দিন জুঁই করবী,
সেদিন দেখি স্থির জলেতে
এক পলকে নৌকাডুবি!
সার্সি জুড়ে জলের ধারা,
আর্শি জুড়ে রক্ত জবা,
বুকের ভিতর অথালপাতাল,
সুর ধরেছে পাগলা ভাবা,
মাথার মধ্যে হুলস্থূল
দিন কেটে যায় উপেক্ষাতে,
আশ্রয় দেন বিসমিল্লাহ
সানাই সুরে গভীর রাতে
চোখে নিচে পড়ছে কালি,
ঘুরছি ভীষণ ক্লান্ত মুখে,
পথে ঘাটে প্রশ্ন আসে,
“ভুগছো ভায়া কোন অসুখে?
মনের অসুখ মনের অসুখ,
অসুখ গুলো গোষ্ঠিগত,
প্রবীণ যত ভালোবাসা,
অশোক সাজায় নিজের মতো।
কাছে থেকেও অনেক দূরে
চেনামানুষরা ভিনদেশী,
আসল কথা মানুষ মানেই,
মুখোশ পরা ছদ্মবেশী
মুখোশ ছিঁড়ে বৃদ্ধ হবো,
স্থির হবো মহানির্বাণে,
স্থবিরতা এক কুশি জল,
স্বজন হারা শ্মশান জানে।
মৃত্যুবিহীন হৃদয় জুড়ে
অভিসন্ধান পরশমণির,
লন্ড ভন্ড জীবনযাপন,
আশ্রয় দেয় হসংধ্বনি।