কদরহীন লিখেছেন অলোক দাঁ

কদরহীন, লিখেছেন অলোক দাঁ
কদরহীন, লিখেছেন অলোক দাঁ

কদরহীন

অলোক দাঁ


শিবনাথ বড় ভুলোমন। চোখের সামনে ভাসছে অথচ জিনিসটা সারা বাড়ি খুঁজে তোলপাড়। মেয়েকে বকা। পত্নী বা গিন্নীকে ঝাড়। গিন্নী নিরীহ প্রকৃতির হলেও মেয়ে কুড়মুরের সাপোর্ট পেলে ফণা তুলতে ছাড়ে না। কোন কিছু হারালে কেউ হারবার নয়। পরস্পরের ওপর দোষারোপ করে দারুণ খুশি প্রত্যেকে। তারপর নিরুদ্দেশ বস্তুটি পাওয়া গেলে কারো হাসি উধাও, কারো মুখে বিজয়ের তুমুল হাসি। যেন কেউ ঠকেছে কেউ জিতেছে। বাজার করে এসে ভালো টাটকা জিনিস নিয়ে এসেও কারো প্রশংসা আজো পেলো না শিবনাথ। বড় দুঃখ, বড় হতাশা। মনে হয় এ সন্দেহবাতিক সংসারে বসবাস না করে বৃদ্ধাবাসের বাকি দিনগুলো বন্ধু-বান্ধব নিয়ে কাটিয়ে দাওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ হবে। না যেতে সক্ষম না হলেও স্ত্রী কন্যার কাছে বোমা ফাটানো যেতে পারে। তা ফাটলো বটে একসময়। কিন্তু প্রতিপক্ষের হাতে ঘি এর পরিবর্তে জল রেডি ছিল। আগুন জ্বালাতেই পেলো না। অবশেষে শিবনাথ নকল অসুখের শয্যা নিলেন। দিন দুই কেটে গেল। বাজারে কে যাবে? ঘরে সব জিনিস বাড়ন্ত। নিরুপায় কাবেরী হাতে থলে নিলে তুলে। মেয়ে কুড়মুর হাতের সুদৃশ্য ব্যাগে মোবাইল আর বাবার দেওয়া হাজার টাকা। মা নিয়ে বাজার সেরে ফিরে এসেছে। পাঁচশ  টাকার বাজার। ব্যাগ দুটোই খালি খালি। পিটপিট চোখে তাকিয়ে কঁই কঁই কন্ঠে শিবনাথ বলেন থলে খালি কেন? মেয়ে হাসতে হাসতে বাবার পাশে বসলো। হাসছিস কেন?
মা করবে বাজার! দাম শুনে মুখ ব্যাজার। এতদাম হয় নাকি? কোথাও বলেছে বাজে মাল। মাছ মাংস কিনতেই পারল না। চারটি ডিম আর পটল আলু শাক কিনেই ঘাম মুছতে শুরু করে দিল।
তরাক করে লাফিয়ে উঠে হা হা হাসিতে ছাড়া বাড়ি কাঁপিয়ে তুললেন শিবনাথ মা মেয়ের চোখ ছানাবড়া। শিবনাথ তো সুস্থ। একি বাবা তুমি- কুড়মুরের কথা শেষ না হতেই শিমনাথ বললেন, আমি পরীক্ষা নিলাম। আমার কিছুই হয়নি। সারা জীবন খোটা খেয়ে খেয়ে এই চালটা চাললাম। বাজার করা অতই সোজা? দে টাকা, দে থলে। কাবেরী ততক্ষণে বাথরুমে মুখ লুকিয়ে। বিজয়ী শিবনাথ ছুটলেন বাজার।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top